টাঙ্গাইলের গোপালপুরে লাল-সবুজের রঙে সেজেছে ১৫৭টি বিদ্যালয় ভবন। দৃষ্টিনন্দন ‘এক্সিল্যাণ্ট স্কুল’ গুলোর একেকটি যেন ক্ষুদ্র বাংলাদেশের জানান দিচ্ছে। গত বছর বিজয়ের মাসে জাতীয় পতাকার রঙ-রূপে সজ্জিত ওই ১৫৭টি বিদ্যালয় ভবন শিশুদের উপহার স্বরূপ দিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গোপালপুর উপজেলার সর্বমোট ১৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৫৭টি বিদ্যালয় ভবনকে জাতীয় পতাকার রঙ আর রূপে সজ্জিত করা হয়েছে। এছাড়া বাকি ৪টি বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত হওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণ শেষে এ রূপে সজ্জিত করা হবে।
শিশুদের স্কুলগামী করা, ঝরে পড়া রোধ, জাতীয় পতাকা ও সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে হাতেখড়ি দেয়ার লক্ষে গোপালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন মহান বিজয়ের মাসে ব্যতিক্রমধর্মী এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙ আর বৈচিত্র্যে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে উপজেলার ১৫৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন। পেশাদার শিল্পীদের দিয়ে ভবনগুলো অঙ্কন করায় একেকটি স্কুলকে দেখলেই মনে হয় যেন একেকটি লাল-সবুজের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাংলাদেশ। একইভাবে এর বেশ কিছু স্কুলের ভেতরের দেয়ালও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন চিত্রকেও প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা ও নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আনজু আনোয়ারা ময়না গণবিপ্লবকে জানান, এটি একটি মডেল। লাল-সবুজ পতাকায় মোড়ানো ভবন মানেই সেটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এজন্য এখন আর কাউকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুঁজে পেতে কষ্ট করতে হচ্ছে না। তিনি গণবিপ্লবকে আরো জানান, এ রূপে সাজানোর ফলে স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে পড়া কোমলমতি শিশুও এখন সহজেই জাতীয় পতাকা ও এর রঙ সহজে জানতে পাড়ছে। এতে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে শুরুতেই জাতীয় সঙ্গীত গাইতেও শিশুরা স্বাচ্ছন্দবোধ করছে। এরই মধ্যদিয়ে পতাকার লাল-সবুজ রঙের বিশেষত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়াসহ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন আর আত্মিকভাবে দেশপ্রেমের শিক্ষা পাচ্ছে। একই সাথে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে আগ্রহও দেখাচ্ছে শিশুরা। এতে শিশুদের হৃদয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত হওয়াসহ নিখাদ দেশপ্রেম জন্ম নেবে বলেও মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে গোপালপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম রুমি গণবিপ্লবকে জানান, উপজেলার বিত্তবান, অভিভাবক ও শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তায় বিদ্যালয়কে শিশুদের জন্য সেকেন্ড হোম করার ভাবনায় ‘এক্সিল্যাণ্ট স্কুল’ নামে ব্যতিক্রম উদ্যোগের জাতীয় পতাকার লাল ও সবুজ রঙ আর রূপে সজ্জিত করা হয়েছে। উপজেলার এই ১৫৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২৭ হাজার শিশু পড়ালেখা করে। এসব শিশুদের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ শেখানোর পাশাপাশি প্রত্যেকটি বিদ্যালয়কে শিশুদের জন্য সেকেন্ড হোম করার ভাবনা থেকেই ‘এক্সিল্যাণ্ট স্কুল’ নামে ব্যতিক্রম এ উদ্যোগটি গ্রহণ করা হয়। এর সাফল্য ইতোমধ্যেই বিদ্যালয়গুলোতে লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও ভর্তির হার বৃদ্ধি পেয়ে।