নিজস্ব সংবাদদাতাঃ
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে চলছে জমজমাট কোচিং বাণিজ্য। ফরম পূরণের আড়ালে শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে। যার ফলে বোর্ড ফি সর্বোচ্চ ১৮৩৫ টাকার বিপরিতে উপজেলার একজন এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ফরম পূরণের জন্য ২০০০ টাকা থেকে ৪০০০ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে টাকার রর্শিদ সরবরাহ করা হচ্ছেনা শিক্ষার্থীদের। আর এ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র অভিভাবকরা। একরকম মাছের বাজারের মতো দরকষাকষি করে নেয়া হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষার ফি। উপজেলার অধিকাংশ বিদ্যালয় গুলোতে পাল্লা দিয়ে চলছে ফরম পূরণ নিয়ে অনিয়ম। প্রতি বছর শিক্ষা মন্ত্রনালয় অতিরিক্ত ফি না নিতে প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রতি নির্দেশনা দিলেও অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তা মানছেন না। আর মন্ত্রনালয় নির্দেশ দিয়েই যেন তাদের কাজে শেষ। তদারকির অভাবে গ্রামের হত দরিদ্র সহজ সরল অবিভাবকদের কাছ থেকে অর্থ লোপাট করে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো।
পাথরাইল বহুমুখি উচ্চ বিদ্যালয়, নাল্লাপাড়া বেলায়েত হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, সৈয়দ জব্বার আলী উচ্চ বিদ্যালয়, ড.এফ আর খান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, নলশোঁধা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাথুলি উচ্চ বিদ্যালয়, এলাসিন উচ্চ বিদ্যালয় সহ অধিকাংশ বিদ্যালয় গুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে অতিরিক্ত ফি আদায়ের অভিযোগ। আর এই অভিযোগ গুলোর সুষ্ঠ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন উপজেলার শিক্ষানুরাগীরা।
পাথরাইল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বীনবন্ধু প্রামণিকের সাথে কথা বলার জন্য তার বিদ্যালয়ে গেলে তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে জানা গেছে গত এক সপ্তাহ যাবৎ তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না।
‘অনেকের অভিযোগ, দরিদ্র অভিভাবকরা তার কাছে টাকা কমানোর জন্য অনুরোধ করবে বলে তিনি প্রতিবছর কৌশলে এই সময় বিদ্যালয়ে থাকেন না। এ ব্যাপারে তার সাথে মুঠফোনে কথা হলে তিনি জানান, ২০০০ হাজার বা ২২০০ টাকা করে নিচ্ছি। আবার অনেকে টাকাই দেয়নি। কোচিং বাবদ কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না। তবে ওই স্কুলের নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৩ জন ছাত্রী জানান, আমাদের কাছে ৪৫০০ টাকা করে চেয়েছিলো কিন্তু আমরা দেইনি। পরবর্তীতে ৩৫০০ টাকা করে নিয়েছে। আর মডেল টেস্ট পরীক্ষার জন্যও এর আগে আমাদের কাছ থেকে ৮০০ থেকে ১০০০ হাজার টাকা করে নেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন অবিভাবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা গাভীর দুধ আর বাড়ির সবজি বিক্রি করে সংসার চালান। পরীক্ষার ফরম পূরণের একসাথে ৩৫০০/৪০০০ হাজার টাকা দিতে পরের কাছে থেকে ধার দেনা করতে হয়েছে। উপজেলার বেশ কিছু বিদ্যালয় সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে অধিকাংশ বিদ্যালয় মানছেন না শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা। নেওয়া হচ্ছেনা শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি। নানা খাত তৈরি করে পকেট ভারির মহাৎসব চালিয়ে যাচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে দেলদুয়ার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মজিবুল আহসান গণবিপ্লবকে বলেন, বোর্ড ফি সর্বোচ্চ ১৮৩৫ টাকা। এর বাইরে হয়তো প্রতিষ্ঠানের কিছু বৈধ পাওনা থাকতে পারে। তবে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার ব্যাপারে তদন্ত করে দেখবো। যদি কোন প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত ফি নিয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, দূর্বল ছাত্র ছাত্রীদের জন্য স্কুলে কোচিংয়ে পড়ানোর কথা নীতিমালায় রয়েছে। তবে তা হতে হবে নিয়ম অনুযায়ী। এসএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কোন শিক্ষার্থীকে স্কুলে কোচিং করাতে বাধ্য করা যবেনা। এটা নির্ভর করবে শিক্ষার্থীর উপর।