মো. আল-আমিন খানঃ
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল গ্রামের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ঝিনাই নদীর শাখা লাঙ্গুলিয়া নদী দিয়ে প্রবাহিত স্রোতের সাথে ভেসে আসা বালি পড়ে বাসাইল পৌর এলাকার অন্তর্ভুক্ত মাইজখারা বিলের প্রায় ২শ একর আবাদী জমি বালুর নিচে পরেছে। অতিরিক্ত বালু পরার ফলে জমির মাটি হারিয়েছে উর্বরতা। বিশাল পরিমাপের এ জমি গুলো উর্বরতা হারিয়ে পরিনত হয়েছে পরিত্যক্ত জমিতে। এর ফলে এ জমিতে উৎপাদিত ফসলে নির্ভরশীল এলাকার প্রায় দেড় শতাধিক কৃষক পরিবারের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। দ্রুত এ জমিগুলো থেকে বালু সড়িয়ে নেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে উপজেলার কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ভূমিহীন হয়ে পরবে এ সকল কৃষক পরিবার।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে জানা যায়, গত বর্ষা মৌসুমে ঝিনাই নদী থেকে ভেসে আসা বালি লাঙ্গুলিয়া নদী দিয়ে মাইজখারা উত্তর বিল, দক্ষিণ বিল, পশ্চিম বিল, সেহরাইলের দক্ষিণ বিল ও কলিয়া পশ্চিম বিলে এসে পড়ে। এতে পলি গঠিত বেলে-দোআঁশ মাটির তিন ফসল আবাদী জমি প্রায় আড়াই থেকে তিন ফিট বালির নিচে চাপা পড়ে চাষাবাদের সম্পূর্ণ অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। বালি চাপা পড়া এলাকার অনেক কৃষক এসব জমি থেকে ফসল উৎপাদন করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করতো। খাদ্য শস্য উৎপাদনের শেষ সম্বল একচিলতে জমি বালির নিচে চাপা পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার বিশাল সংখ্যক কৃষক পরিবার। এই জমি আবাদ না করতে পারলে এলাকার কৃষকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে সারা বছর কীভাবে বেচে থাকবে এমন দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন তারা।
এ সময় মাইজখারার কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, আমার ৩ একর জমির উপর বালু পড়েছে। এ জমিতে তিন ফসল আবাদ করা যেতো, কিন্তু এখন সম্পূর্ণ জমি ফসল উৎপাদনের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। একমাত্র কৃষি উৎপাদনের উপর নির্ভর করেই চলে আমার সংসার। আসন্ন বোরো মৌসুমের আগে জমিগুলোর বালি মুক্ত করা না গেলে কোন প্রকার ফসল আবাদ করা যাবে না। এতে না খেয়ে মরণ ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই।
কৃষক আতাউর রহমান আতা বলেন, ঝিনাই নদী থেকে ভেসে আসা বালু লাঙ্গুলিয়া নদী দিয়ে এ বিলে পড়ে প্রায় ২শ একর কৃষি জমি প্রায় বিনষ্ট হয়েছে। জমিগুলো হয়ে পরেছে উৎপাদনের সম্পূর্ণ অনুপযোগি। এখানে এর মধ্যে আমারও ২ একর জমিতে বালু পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ এ সকল জমির কৃষকরা দাবী বালু অপসারণ কাজে সরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন। এবং ভবিষ্যতে এলাকার কৃষকের আবাদী জমি যাতে বর্ষায় ভেসে আসা বালুতে গ্রাস করতে না পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে রয়েছে জোর দাবী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ফারুক জানান, আমি ইতমধ্যেই বালু চাপা পড়া জমি এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। সেহরাইল হইতে পশ্চিম চক পর্যন্ত লাঙ্গুলিয়া নদীর পূর্ব পাশ মাইজখারা এবং কলিয়ার কিছু অংশসহ প্রায় ২শ একর জমিতে বালু পড়ে আবাদের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। সেহরাইল হইতে পশ্চিম চক পর্যন্ত লাঙ্গুলিয়া নদীর ৪ কিলোমিটার এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে ভবিষ্যতে এ জমিগুলোতে আর বালু পড়বে না। এখন এ সমস্ত জমি বালু মুক্ত করে আবার চাষাবাদ যোগ্য করে তোলা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সায়মা আক্তার জানান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।