কালিহাতী প্রতিনিধি:
সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরশহরের এলেঙ্গা-পুরাতন ভূঞাপুর সড়ক। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সড়কে বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এতে করে চরম ভোগান্তির শিকার এলাকার সাধারণ মানুষ। গত (২৫-২৬ সেপ্টেম্বর) দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে এলেঙ্গার জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক এলেঙ্গা-পুরাতন ভূঞাপুর সড়কে বৃষ্টির পানি হাটুর ওপরে উঠে গেছে। এই সড়কের দুই প¦ার্শের দোকানগুলোতে পানি ঢুকে অনেক মালামাল ভিজে গেছে। এতে চরম ক্ষতির সম্মুক্ষিন হবেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। এমনিতেই এই সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে বেশিরভাগ স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে ১/২ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এরপর বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকা গর্তের ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে চালক ও যাত্রীদের।
জানা যায়, উত্তেরবঙ্গের প্রবেশদ্বার টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র এলেঙ্গা ইউনিয়নকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয় ২০১১ সালের ৭ এপ্রিল। এলেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৩৩টি গ্রামের সাথে পার্শ্ববর্তী বাংড়া ইউনিয়নের রাজাবাড়ী গ্রামকে সংযুক্ত করে এলেঙ্গাকে পৌরসভায় রূপান্তরিত কর হয়। ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সটি বর্তমানে পৌরভবন হিসেবে ব্যবহৃত করা হচ্ছে। মোট ২৩ দশমিক ২৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে এলেঙ্গা পৌরসভার লোকসংখ্যা ৫৫ হাজার। এরমধ্যে ২৬ হাজার ৯’শ ৫০ জন পুরুষ ও ২৮ হাজার ৫০ জন মহিলা। আর পৌরসভার সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলো এলেঙ্গা-পুরাতন ভূঞাপুর সড়ক। সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে । এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বঙ্গবন্ধুসেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার আগে এ সড়কটি ছিল অতিব গরুত্বপূর্ণ । তখন এ সড়ক দিয়েই ভূঞাপুর উপজেলা, তারাকান্দি সারকারখানা ও উত্তরবঙ্গের যানবাহন চলাচল করত। বর্তমানে পুরাতন ভূঞাপুর সড়কটি কলেজ রোড ও হাইস্কুল রোড হিসেবে পরিচিত । সরকার মহাসড়কে তিন চাকার যানচলাচল নিষিদ্ধ করার পর এ সড়কের গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধুসেতু উদ্বোধনের পর সড়কটির বড় ধরনের কোন সংস্কার কাজ করা হয়নি। ফলে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত অনেক ঝঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে কলেজ মোড় হয়ে বিশ্বরোড সংযোগ সড়ক পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগ জায়গায় কার্পেটিং উঠে গিয়ে ছোট বড় শতাধিক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে পুরাতন ভূঞাপুর সড়কের প্রবেশ মুখে ডাচ বাংলা ব্যাংক সংলগ্ন ও কলেজ মোড় এলাকায় ১/২ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষায় সড়কটি আরো ভয়াভহ রূপ ধারণ করেছে। টানা বৃষ্টিতে সড়কে হাটুর ওপরে পানি উঠে গেছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সড়কের ওপর বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার । পানির নিচে লুকিয়ে থাকা ওইসব গর্তের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানচলাচল করতে গিয়ে প্রতিদিনই ছোট বড় অনেক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। আর এ সড়কের দুই পাশে রয়েছে ইসলামি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, রূপালি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, এলেঙ্গা হাসপাতাল, আল-রাজি ক্লিনিক, এলেঙ্গা শামসুল হক ডিগ্রি কলেজ, জিতেন্দ্র বালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, এলেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়, এলেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এলেঙ্গা পুলিশ ফাঁড়ি, রফিক রাজু ক্যাডেট একাডেমী, প্রাইম একাডেমী, উদ্ভাস একাডেমী,ফরহাদ ক্যাডেট একাডেমী, হৃদয় শিশু নিকেতন, শাহীন স্কুল, অক্সফোর্ড ইন্টার ন্যাশনাল স্কুল, সহস্রাধিক ব্যবসায়াকি প্রতিষ্ঠান, এলেঙ্গার টিনের বাজার। এলেঙ্গা পৌরসভাসহ কালিহাতীর পশ্চিমাঞ্চল দশকিয়া ও দুর্গাপুর ইউনিয়নে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাও এটি। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়ে এ রাস্তায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত করে থাকেন। এছাড়া রাস্তার দুই পাশে ফুটপাত দখল কের অনেক অবৈধ স্থাপনা থাকার কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে আরো বহুগুণ। পৌর কর্তৃপক্ষ খোলা ড্রেনেজ ব্যবস্থা করলেও তা কাজে লাগছে না। ময়লা আবর্জনা জমে তা ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া মাঝে মাঝে দায় সারানোভাবে রাস্তায় নিম্নমানের ইট খোয়া দিয়ে মেরামত করলেও তা যতসামন্যই। এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানচালক ও যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- দেশের অন্যকোন পৌর এলাকার অবস্থা এরকম না। একে তো সড়ক অনেক ভাঙাচোর তার ওপর আবার জলাবদ্ধতা। এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে আমরা প্রতিনিয়তই ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হই। এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম সরকার বলেন, এলেঙ্গা-পুরাতন ভূঞাপুর সড়ক পৌরসভার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক । এজন্য সড়কটি খুব দ্রুতই মেরামত করা প্রয়োজন। সেইসাথে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থার বিশেষ প্রয়োজন।
এ বিষয়ে এলেঙ্গা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আব্দুল বারেকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পূর্বের বক্তব্যের সুর ধরেই বলেন, এলেঙ্গা-পুরাতন ভূঞাপুর সড়কটি আগে সড়ক ও জনপদ বিভাগের ছিল এখন সড়কটি পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। গত কয়েকমাস আগে চার লাখ টাকা ব্যয় করে সড়কটির বেশি খারাপ অংশ মেরামত করা হলেও বেশিদিন টেকেনি। রাস্তাটি পুননির্মাণের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সড়কটি এক বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। সড়কটি প্রশস্তের পাশাপাশি মাঝখানে আইল্যান্ডসহ পানি নিস্কাশনের জন্য দুইপাশে থাকবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এতে ব্যয় হবে বার কোটি টাকা । বর্ষা মৌসুমের জন্য কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে বর্ষার পর খুব শীগ্রই এর কাজ শুরু হবে।