ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃ
ছোট বেলায় বই পড়ে কোয়েল পাখি সম্পর্কে জেনেই স্বপ্ন দেখেছেন কোয়েল পোষার। কিন্তু টাকার অভাবে তা পূরণ হয়নি। স্বপ্নের কথা জানালেও রাজি হয়নি অভিভাবকরা। বাধ্য হয়ে অভিভাবকদের ইচ্ছায় অর্থ উপার্জনে পাড়ি জমাতে হয় প্রবাসে। টাকা জমিয়ে ছয় বছর প্রবাস জীবন শেষ করে দেশে ফিরে ২০১২ সালে বাড়ির পাশে ২০ শতাংশ জমির ওপর ৫০০ কোয়েলের বাচ্চা নিয়ে গড়ে তুলেন শখের সেই কোয়েল পাখির খামার। বর্তমানে খামারে কোয়েল পাখির সংখ্যা ১২ হাজার। এরমধ্যে লেয়ার পাখি সাত হাজার। প্রতিমাসে পাঁচ হাজার কোয়েল নিয়মিত ডিম দিচ্ছে। ওইসব ডিম ও ব্রয়লার ঢাকা ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে মাসে চার-পাাঁচ লাখ টাকা বিক্রি করছেন। এখন এ উদ্যমী যুবকের মাসিক আয় লাখ টাকার ওপরে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন, টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কচুয়া গ্রামের শামীম আল মামুন। ওই যুবক এলাকায় এখন ‘কোয়েল শামীম’ নামে সমধিক পরিচিত।
আতœপ্রত্যয়ী যুবক শামীম আল মামুন জানান, উপজেলার প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, বগুড়ায় কোয়েল পাখির বাচ্চা পাওয়া যায়। ছুটে যান সেখানে। ২০ হাজার টাকা দিয়ে ৫০০ বাচ্চা কিনে যাত্রা শুরু করেন কোয়েল পোষার। বই পড়ে, প্রাণি সম্পদ বিভাগের সহযোগিতা ও বাচ্চা বিক্রেতাদের কাছে নিয়ম জেনে প্রথমে নিজেই কোয়েলের যতœ নিতে থাকেন। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে গড়ে ওঠে সখ্যতা। ব্যস্ততার মাঝে খুঁজে পান এক প্রকার বিনোদন। সেখান থেকে প্রতি মাসে আয়ের অংশ খুঁজে পাওয়ায় উৎসাহ আরও বেড়ে যায়। বাড়াতে থাকেন কোয়েলের সংখ্যা। ইঞ্চি ইঞ্চি করে বাড়তে থাকে কাজের ব্যাপকতা, সোনার হরিণ সফলতা ধরা দেয় হাতের মুঠোঁয়। খামারে এখন পাঁচজন শ্রমিক কাজ করছে।
শামীম আরও জানান, ‘ইনকিউবেটরে’ প্রতি সপ্তাহে ৮-১০ হাজার বাচ্চা ফুটানো হচ্ছে। ওইসব বাচ্চা প্রতিদিন সখীপুর ছাড়াও ঢাকা, বগুড়া, নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০টি খামারে সরবরাহ করা হচ্ছে। কোয়েল পরিবেশ বান্ধব পাখি। তাই প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকা থেকে খামার দেখার জন্য আসা লোকজন জানতে চান কোয়েল চাষের কলাকৌশল। লেয়ার জাতের কোয়েল ৪২-৪৫ দিনের মধ্যেই ডিম দেওয়া শুরু করে ও টানা ১৮ মাস ডিম দিয়ে থাকে। অপরদিকে, ব্রয়লার জাতের কোয়েল ২৮ দিনের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। একটি কোয়েল প্রতি বছরে ২৮০-৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
সখীপুর বাজারের ডিম ব্যবসায়ী ফজলুল হক জানান, তিনি বাজারে সিদ্ধ ডিম বিক্রি করেন। মুরগীর চেয়ে কোয়েলের ডিমে বেশি লাভ হয়, চাহিদাও প্রচুর।
উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা হেলাল আহমেদ জানান, কোয়েল পালন অল্প পুঁজিতে একটি লাভজনক ব্যবস্যা। মাংস ও ডিম খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। রোগির পথ্য হিসেবেও খুব উপযোগী। ডিম ও মাংসে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকায় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এছাড়া কোয়েল পালনে কোনো ঝুঁকি নেই। মুরগীর ভ্যাকসিন দিয়েই এর চিকিৎসা করা যায়।
