কালিহাতী প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগে বিদ্রোহী প্রার্থী ও বিএনপি নেতাদের সমন্বয়হীনতায় ভোটের হিসাব ঘোলাটে হয়ে পড়েছে।
পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন বর্তমান মেয়র আনছার আলী বিকম, নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আ’লীগ বিদ্রোহী) হিসেবে হুমাযুন খালিদ, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সাবেক মেয়র আলী আকবর জব্বার, জগ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদুল ইসলাম শহীদ মেয়র পদে লড়ছেন। এ পৌরসভায় নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও অন্য দুই প্রার্থী কারো জন্য সহায়ক ও কারো জন্য মহাবিপদ। এরমধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বি উভয় প্রার্থীর জন্য নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী(আ’লীগের বিদ্রোহী) হুমাযুন খালিদ ‘টার্মকার্ডে’ পরিণত হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হুমায়ুন খালিদের নিজ কেন্দ্রটিতে পৌরসভার সবচেয়ে বেশি ভোটারের বসবাস। ওই কেন্দ্রটি বিএনপি প্রার্থী আলী আকবর জব্বারের অন্যতম ভোটব্যাংক হিসেবে পরিচিত হলেও এলাকাটি আওয়ামীলীগ অধ্যুষিত। বিগত নির্বাচনগুলোতে এ কেন্দ্রের ভোটই মেয়র পদের জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে। এবারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র আনছার আলী বিকম-এর নৌকা প্রতীকের পক্ষে জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীরা ওই এলাকায়ই গণসংযোগ চালাচ্ছেন বেশি। এদিকে, ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপির নেতাকর্মীরা ধানের শীষের প্রার্থী সাবেক মেয়র আলী আকবর জব্বারের বিরুদ্ধে নির্বাচন পরিচালনায় সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করছেন।
শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় কুয়াশা-ঢাকা ভোর হতে কনকনে শীতের মধ্যরাত পর্যন্ত ভোট প্রার্থণায় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঘরে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর, কাউন্সিলর পদের ৫০ জন প্রার্থী। প্রচারণায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে মনকাড়া গানের সুরে মাইকিং। ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর এলাকা। এতে ভোটাররাও আছেন খোসমেজাজে, তবে অনেকেই নিজের ভোটটি নিজে দিতে পারা না পারা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন।
সচেতন ভোটাররা মনে করছেন প্রথমবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় অনেক ভোটারই দলমতের উর্ধে পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিতে দ্বিধাগ্রস্ত। বিগত ২০১১ সালের ১৭ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের নিজ নিজ কেন্দ্র বাদে আনছার আলী বিকম পেয়েছিলেন ৩৯.৭% ও আলী আকবর জব্বার পেয়েছিলেন ৪৪.৪% ভোট। সেজন্য প্রতিবারের মতো এবারও মূল ফ্যাক্টর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের নিজ এলাকার ভোট। এমনই ঘোলাটে পরিস্থিতিতে কালিহাতীবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন তাদের ভবিষত পৌর-পিতার জন্য।
নৌকার মাঝি আনছার আরী বিকম জানান, এলাকার জনগনের কাছে তিনি পরীক্ষিত। চেয়ারম্যান ও মেয়র থাকাকালে তিনি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছেন। বিগত সময়ের ভাল কাজ ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে ভোটাররা তাকেই নির্বাচিত করবেন।
ধানের শীষের কান্ডারি আলী আকবর জব্বার জানান, আওয়ামীলীগের প্রার্থী নির্বাচনী আচরন বিধি ভঙ্গ করলেও প্রশাসনে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। অথচ নির্বাচন কমিশন অহেতুক তাদেরকে হয়রানী করছে। ভোট ডাকাতির আশঙ্কা করে তিনি বলেন, বর্তমান মেয়র দলীয় লোকদের বাইরে কারো উপকারে লাগেনি। পৌরসভার উন্নয়নে তিনি দৃষ্টিগ্রাহ্য কোন কাজ করেননি। তার ব্যর্থতার জন্য ভোটাররা গোপনে ‘ভোটবিপ্লব’ ঘটাবে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে এ পৌরসভায় ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত বলে দাবি করেন তিনি।
১৭ টি গ্র্রাম নিয়ে গঠিত কালিহাতী পৌরসভার মোট ভোটার ২৪ হাজার ৮৪৭। এরমধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ১৬৭ এবং মহিলা ভোটার ১২ হাজার ৬৮০জন।