মো. আল-আমিন খান:
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার আলাউদ্দিন সিদ্দিকী মহাবিদ্যালয়ের ব্যবসায় বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আল-আমিন’র স্মরণে শোক সভা, দোয়া মাহফিল এবং হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এলাকাবাসীর আয়োজনে বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় শুরু হয়ে প্রায় ঘন্টাখানেক মানব বন্ধন করে। আলাউদ্দিন সিদ্দিকী মহাবিদ্যালযের সামনে মানব বন্ধন করা হয়। এতে আল-আমিনের কলেজের সহপাঠী ও গ্রামবাসীসহ হাজার হাজার নারী পুরুষ মানব বন্ধনে অংশ গ্রহণ করেন। এসময় তারা মূল হত্যাকারী চাঁন মাহমুদকে ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। পুরো এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে তার সহকর্মি ও শিক্ষকগন। খুনিদের ফাসির দাবী জানিয়ে কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ সভা ও মানব বন্ধন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন। পিতামাতা তাদের সন্তানকে হারিয়ে এখন পুত্র শোকে কাতর। কেউই থামাতে পারছে না তাদের গগনবিদারী আহাজারি। চান মাহমুদের পরিবারের লোকজন খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অপরাধীকে তার প্রাপ্য সাজা দেওয়া যাবে কি না এ নিয়ে জনমনে সন্দিহান রয়েছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় আলাউদ্দিন সিদ্দিকী মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে এক শোক সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আলাউদ্দিন সিদ্দিকী মহাবিদ্যালয় এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল কাশেম’র সভাপতিত্ব শোক সভায় বক্তব্য রাখেন কালিহাতী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ তোতা, সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হানিফ উদ্দিন তাং, কলেজের পরিচালনা পরিষদের বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও সাপ্তাহিক গণবিপ্লবের প্রকাশক ও সম্পাদক মো. মোশারফ হোসেন সিদ্দিকী ঝিন্টু , বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির টাঙ্গাইল জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আজাহার আলী মিয়া, কালিহাতী উপজেলা বাকশিস এর সম্পাদক বাবর আলী তাং , অধ্যাপক আব্দুল হালিম, অধ্যাপক উৎপল সিংহ রায় প্রমুখ। এসময় বক্তারা আল আমিনের হত্যাকারীর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি করেন।
অপর দিকে, সোমবার (২৪ অক্টোবর) বিকাল ৪ টার দিকে আলাউদ্দিন সিদ্দিকী মহাবিদ্যালয় মাঠে জানাযা নামাজের জন্য আনার সংবাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। মুহুর্তে আশপাশের ৪-৫ গ্রামের মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য ছুটে আসে। এক পর্যায়ে ছুটে আসা মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে কলেজ ক্যাম্পাস ও আউলিয়াবাদ বাজারে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবকরা অংশ নেয়। পরে উপজেলা চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পরে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে বাদ আসর আলাউদ্দিন সিদ্দিকী মহাবিদ্যালয় মাঠে নিহত আল-আমিনের জানাযা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
জানাযা নামাজে কালিহাতী উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু নাসার উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী বিকম, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কাশেম সহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ কয়েক হাজার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। জানাযা শেষে খালুয়াবাড়ী সামাজিক গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় আল আমিন ও চাঁন মাহমুদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হওয়ার এক পর্যায়ে প্রকাশ্য দিবালোকে চাঁন মাহমুদ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আল আমিনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
আল-আমিন উপজেলার আউলিবাদের আলাউদ্দিন সিদ্দিকী মহাবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র এবং নাগবাড়ি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি। আউলিয়াবাদ কলেজের পেছনেই এ ঘটনা ঘটে। খুনের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ওইদিনই সহপাঠী চান মাহমুদকে আটক করে পুলিশ। আল আমিনের পিতা আব্দুল আলীমও একই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। ওইদিন রাতেই নিহতের পিতা বাদি হয়ে কালিহাতী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আখেরুজ্জামান জানান, সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ১১টার পর নিহত আল আমিনের পিতা আব্দুল আলীম বাদি হয়ে কালিহাতী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১৬, তারিখ ২৪/১০/১৬। এ ঘটনার সময় আটককৃত সহপাঠী চান মাহমুদ ছাড়াও অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামী করা হয়েছে। চান মাহমুদকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) টাঙ্গাইল আদালতে চালান করে তার বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। এ ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার ও হত্যায় জড়িত অজ্ঞাত অপর দুইজনকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।