গণবিপ্লব রিপোর্টঃ
প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে টাঙ্গাইলের ৮টির মধ্যে ৬টিতে সুষ্ঠুভাবে এবং ২টিতে হামলা-সংঘর্ষ-বর্জনের মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় উৎসবমুখর পরিবেশে জেলার ৮ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। প্রতিটি পৌরসভার কেন্দ্রগুলোতেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
ভূঞাপুর পৌরসভায় ভোট গ্রহনের এক ঘন্টার মধ্যে আওয়ামীলীগ ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে আ’লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী তারিকুল ইসলাম চঞ্চল, শ্রমিক নেতা খায়রুল ইসলাম তালুকদার বাবলু সহ অর্ধশত কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।
ভূঞাপুর পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী তারিকুল ইসলাম চঞ্চল(প্রতীক মোবাইল) বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাহাদীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাওয়ামাত্র আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী মাসুদুল হক মাসুদের কর্মী-সমর্থকরা দা-লাঠি নিয়ে তার উপর হামলা করে। ওই হামলায় তিনি দুই সহকর্মীসহ আহত হন।
অপরদিকে, প্রায় একই সময় আওয়ামীলীগের প্রার্থী মাসুদুল হক মাসুদের(প্রতীক নৌকা) সমর্থক ও উপজেলা শ্রমিকলীগের নেতা খায়রুল ইসলাম তালুকদার বাবলু পৌরসভার ঘাটান্দি কেন্দ্রে ভোট দিতে যাওয়ার পথে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক ও দলের অপর বিদ্রোহী প্রার্থী আজহারুল ইসলামের(প্রতীক জগ) ২০-২৫জন কর্মী-সমর্থক হামলা চালায়। হামলাকারীদের দা-লাঠি-হকিস্টিকের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন।
এদিকে, সকাল ১০ টার দিকে ভূঞাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের(নৌকা) সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাহিনুল ইসলাম তরফদার বাদল সহ উভয় পক্ষের প্রায় ৩৫ নেতাকর্মী আহত হন। এছাড়া, পৌরসভার বামনহাটা, তেঘরি ও ছাব্বিশা কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে ১০-১২ জন আহত হয়েছেন।
ধনবাড়ীতে দুই কাউন্সিলর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এজন্য কিছুক্ষণ ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়।
মধুপুর পৌরসভার বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সরকার শহীদুল ইসলাম(সরকার শহীদ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। একই অভিযোগে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হারুন অর রশিদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
এর কিছুক্ষণ পরে একই অভিযোগে ভোট বর্জন করেন গোপালপুর পৌরসভার বিএনপি মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম রুবেল। এর আরও কিছু পৌরসভার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী বেলায়েত হোসেনও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবাব ইনস্টিটিউটে আওয়ামী লীগ সমর্থক কাউন্সিলর প্রার্থী রেজাউল করিম লিটন ভোট দিতে গেলে দুই কাউন্সিলের প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ারও চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শট গানের ছয় রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার শামীম আরা রিনি বলেন, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় অল্প কিছু সময় ভোট গ্রহণ বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার পর আবার ভোট নেয়া হয়।
টাঙ্গাইলের মধুপুর পৗরসভার ৭ নং ওয়ার্ডেও দুই কাউন্সিলের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর হোসেন ভূঁইয়াসহ তিন জন আহত হন।
এছাড়া ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে টাঙ্গাইল সদর পৌরসভার বিবেকানন্দ স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে আকুর টাকুর পাড়ার ইব্রাহিমের ছেলে তনু দেওয়ানকে আটক করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদন্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা শাহনাজ। তনুর বিরুদ্ধে ২৫টি জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। তবে ওই ২৫টি ভোট বাতিল করা হয়েছে বলে জানান প্রিজাইডিং অফিসার মো. নুরুল ইসলাম।
টাঙ্গাইলের ১১ টি পৌরসভার মধ্যে ৮টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইল সদর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন মো. জামিলুর রহমান মিরন, বিএনপির মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতী মাহমুদুল হক সানু, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আবদুল কাদের, খেলাফত মজলিশ-এর হাসনাত আল আমিন।
এ পৌরসভায় ১৮ টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৭৪ জন এবং ৬ টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
ভূঞাপুরে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ, বিএনপির প্রার্থী আবদুল খালেক মন্ডল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আজহারুল ইসলাম ও তারিকুল ইসলাম চঞ্চল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
কালিহাতী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনছার আলী বিকম ও বিএনপির প্রার্থী আলী আকবর জব্বার এবং আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হুমায়ুন খালিদ।
মির্জাপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের সাহাদৎ হোসেন সুমন ও বিএনপির হযরত আলী নির্বাচন করেন।
গোপালপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের রকিবুল হক ছানা এবং বিএনপির প্রার্থী খন্দকার জাহাঙ্গীর আলম রুবেল ও আওয়ামী লীগের বেলায়েত হোসেন। এর মধ্যে রুবেল ও বেলায়েত ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
মধুপুর পৌরসভায় বর্তমান মেয়র সরকার শহীদুল ইসলাম বিএনপির প্রার্থী। তার সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাসুদ পারভেজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু কারচুপির অভিযোগে নির্বাচন বর্জন করেন সরকার শহীদুল ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হারুন অর রশিদ।
সখীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু হানিফ আজাদ ও বিএনপির প্রার্থী নাছির উদ্দিন। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ছানোয়ার হোসেন সজীব, জাতীয় পাটির্র (এরশাদ) আয়নাল হক সিকদার, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফারুক হোসেন।
ধনবাড়ী পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হচ্ছেন খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন ও বিএনপি প্রার্থী এএমএ ছোবহান। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) ফেরদৌস আহমেদ ও আওয়ামলীগৈর বিদ্রোহী(স্বতন্ত্র) প্রার্থী জহিরুল হক হেলাল বকল।