গণবিপ্লব রিপোর্টঃ টাঙ্গাইল পুলিশ রেশন স্টোরের সাবেক ওসি(ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বর্তমানে চাকরিচ্যুত) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে ১২ ব্যক্তির কাছ থেকে ৭১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আতœসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন টাঙ্গাইল মডেল থানায় বুধবার বিকালে মামলা দায়ের করেছে। দুদকের টাঙ্গাইল জেলা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারি পরিচালক মোস্তফা বোরহান উদ্দিন আহম্মদ বাদি হয়ে দন্ডবিধির ৪২০ ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বিবরণে প্রকাশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রধান কার্যালয়ের ২০১৪ সালের ৫ মার্চ ৭১০৫ স্মারকে টাঙ্গাইল জেলা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের ই/আর নং-২১/২০১৪-এর অভিযোগের ওপর টাঙ্গাইলের সাবেক উপ-সহকারি পরিচালক কমল কুমার রায় সরেজমিনে অনুসন্ধান করেন। এতে দেখা যায়, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন(৫৯) ওসি(ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পুলিশ রেশন স্টোর, জেলা পুলিশ টাঙ্গাইল) হিসেবে ২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। সে সময় অবৈধভাবে পুলিশ রেশন স্টোরের মালামাল কম মূল্যে বিক্রির সুবিধা দেয়ার নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে এককালীন টাকা গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও ১৫০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে মাসিক বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে টাকা গ্রহণ করেছেন। যার পরিমাণ আনুমানিক কয়েক কোটি টাকা। এর মধ্যে তার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সালিশী মধ্যস্থতার নামে ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা ফেরত পাওয়ার উদ্দেশে চেক দেন। তার হিসাবে টাকা না থাকায় চেকগুলো ডিজঅনার হয়।
যাদের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জাতিসংঘ মিশনে আইভরি কোস্টে কর্মরত কনষ্টেবল (৩৮৬) মো. ফিরোজ মিয়ার স্ত্রী গোলেনুর বেগমের পুত্র মো. শাকিব হোসেনের কাছ থেকে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পে রেশন স্টোরে কর্মরত উচ্চমান সহকারি এএএস বজলুর করিমকে সাক্ষী করে মাসিক ৫ হাজার টাকা সুদ প্রদানের শর্তে ২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। এরমধ্যে ২০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে অবশিষ্ট টাকা আতœসাত করেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ধুলেরচর গ্রামের শামছুল হকের স্ত্রী শামীমা নাসরিনের কাছ থেকে ১৫০ টাকার স্ট্যাম্পের মাধ্যমে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে অবশিষ্ট ৩ লাখ টাকা আতœসাত করেন। একই গ্রামের মৃত আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী রওশনারা বেগমের কাছ থেকে ৯০ হাজার টাকা, একই গ্রামের মৃত কছিম উদ্দিনের ছেলে আনজু মিয়ার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা, হাজরাঘাটের মো. হুমায়ুন কবীরের স্ত্রী নাজমুন নাহারের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা, কাগমার গ্রামের মো. মজনু মিয়ার স্ত্রী নাছিমা বেগমের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা, সারুটিয়া গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিন সিকদারের ছেলে আবদুল কাদেরের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সাব-ইন্সপেক্টর আ. রউফের কাছ থেকে ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ঋণ হিসেবে নিয়ে আতœসাত করেন। ঢাকা জেলার ধামরাই উপজেলার বাস্তা গ্রামের মৃত মেহের আলীর ছেলে মো. ফজলুর রহমানের কাছ থেকে ২০০৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ২ লাখ টাকা নিয়ে আতœসাত করেন। এ ছাড়াও শহরের আকুর টাকুর পাড়ার আলহাজ্ব কেএ রকিব-এর স্ত্রী বিলকিছ রকিব-এর কাছ থেকে ১ মাসের মধ্যে পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে আতœসাত করেন। মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া থানার পটিলাপাড়া গ্রামের মৃত সমেজ উদ্দিনের ছেলে টাঙ্গাইল ডিএসবি’র কনস্টেবল (৪১০) মো. মোসলেম উদ্দিনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা, একই থানার মালসি গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনের কনস্টেবল (১৩২৬) মো. ছানোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ১ লাখ টাকা নিয়ে আতœসাত করেন।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা পুলিশ তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা (৬/২০১২) দায়ের করে, বিভাগীয় মামলার তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ৭১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আতœসাতের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালের ৬ মার্চ পুলিশ সুপার তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন।
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার তালুকদারনগর গ্রামের মৃত মোকশেদ আলীর ছেলে। তিনি বর্তমানে মানিকগঞ্জ সদরের পশ্চিম বান্দুরিয়া এলাকার ১২৩ নম্বর বাসায় থাকেন।
অপরদিকে, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারে মাদ্রাসার জমি আতœসাতের অভিযোগে ওই উপজেলার আলালপুর গ্রামের এএইচএম আশরাফুল আলম(৫০), একই গ্রামের সরবানু বিবি ওরফে শরবান(৫৮), হাছিনা আজগর ওরফে হাছিনা(৫৫) ও আব্দুল খালেকের ছেলে দলিল লেখক মো. জহিরুল ইসলাম(৪০)-এর বিরুদ্ধে মাদ্রাসার জমি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আতœসাতের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। একই দিন(বুধবার) দুদকের টাঙ্গাইল জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক রাম প্রসাদ মন্ডল বাদি হয়ে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানায় মামলাটি দায়ের করেন।