মো. আল-আমিন খানঃ
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া থেকে এসে জঙ্গিরা আস্তানা গাড়ে টাঙ্গাইলের কাগমারা মির্জামাঠ এলাকার। টাঙ্গাইলের র্যাবের কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, নিহত দুই জঙ্গির মধ্যে আতিকুর রহমান চারঘাট উপজেলার নিমপাড়া গ্রামের লতিফুর রহমান ও মোর্শেদা বেগমের ছেলে। আর সাগর হোসেন একই উপজেলার ইউসুফপুর গ্রামের জুনায়েদ হোসেন ও বিউটি বেগমের ছেলে। এদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
ছাত্র পরিচয় দিয়ে দুই জঙ্গি অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আজাহার আলীর বাসাটি ভাড়া নেয়। এলাকায় তাদের নতুন আসার বিষয়টি র্যাবের নজরে আসলে গত তিন দিন ধরে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল র্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। তাদের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার পর র্যাব অভিযানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ মুহূর্তে র্যাব বাড়িওয়ালার দ্বারস্থ হয়। পুরো বাড়িটি র্যাব ঘিরে ফেলার পর বাড়িওয়ালাকে পাঠানো হয় দরজা খোলার জন্য। দরজায় কড়া নাড়তেই বাড়িওয়ালার গলার আওয়াজ পেয়ে ভেতর থেকে দরজাই খুলতেই র্যাব সদস্যরা দ্রুত ভেতরে ঢোকে। জঙ্গিরা টের পেয়ে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁরে এবং র্যাবের পাল্টা গুলিতে জঙ্গিরা আর সুবিধা করে উঠতে পরেনি। ঘটনাস্থলেই দুই জঙ্গি নিহত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে র্যারের একটি সূত্র বলছে, চলমান দূর্গোৎসবে নাশকতা সৃষ্টির লক্ষে তারা কাগমারায় আস্তানা গাড়ে বলে আমাদের কাছে খবর রয়েছে।
বাড়ির মালিক অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আজাহার আলী বলেন, ছাত্র পরিচয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর তারা বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষ ভাড়া নেয়। এ সময় তাদের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হলে তারা দু-এক দিনের মধ্যে পরিচয়পত্র দেবে বলে জানিয়েছিল। পরে আর তারা তা দেয়নি।
শনিবার সকাল সকাল সাড়ে দশটা থেকে শহরের পৌর এলাকার ৩ নং ওয়ার্ডের মির্জা মাঠ এলাকার এই তিনতলা ভবনে প্রায় ৩ ঘন্টা অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে র্যাবের দুই সদস্য আহত হয়।
র্যাব-১২ অধিনায়ক সামসুদ্দিন খান জানান, আজাহার মাস্টারের তিনতলা ভবনের নিচ তলায় জঙ্গি আস্তানা গড়ে ওঠার একটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত তিনদিন যাবৎ এই বাড়িটির উপর গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে র্যাব সদস্যরা। এক পর্যায়ে তাদের আটক করার জন্য অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত হয়। শনিবার সকালে র্যাব-১২ কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকীর নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল বাড়িটি ঘিরে ফেলে। বাড়ির মালিক আজাহার মাস্টারকে দিয়ে জঙ্গিদের ঘরটি খুলতে বলা হয়। মালিকের কন্ঠ শুনে জঙ্গি সদস্যরা ঘরের দরজা খোলার সাথে সাথে র্যাব সদস্যরা ভেতরে ঢুকে পড়ে।
কোম্পানির কমান্ডারসহ কয়েকজন ভেতরে ঢোকার পর এক জঙ্গি র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। র্যাবও পাল্টা গুলি চালালে ঘটনাস্থলে ওই দুই জঙ্গি নিহত হয়। দুপুরে র্যাবের বোমা বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থলে যায় এবং তারা লাশ দুটি বের করে নিয়ে আসে। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশী পিস্তল, একটি রিভলবার, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দশটি চাপাতি, দুইটি ল্যাপটবসহ ৬৬ হাজার ৯’শ ৬২ টাকা উদ্ধার হয়।