গণবিপ্লব রিপোর্টঃ
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ি ইউনিয়নের খারজানা গ্রামে অনৈতিক কাজ করতে যাওয়ায় ভাসুরের পুরুষাঙ্গ কেটে দিয়েছে এক গৃহবধূঁ। এ নিয়ে আদালতে উভয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে স্থানীয় ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে একটি মহল অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
জানাগেছে, খারজানা গ্রামের মৃত কাশেম মন্ডলের ছোট ছেলে সোনা মিয়া দেড় বছর আগে চাকুরি নিয়ে বিদেশে(কাতার) চলে যায়। এর পর থেকে সোনা মিয়ার স্ত্রী সুমী বেগমকে(৩০) তার ভাসুর মো. ফজল হক(৪৫) অনৈতিক প্রস্তাব দিতে থাকে। ভাসুরের অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সুমী বেগমকে পারিবারিক পর্যায়ে নানাভাবে ফজল হক হয়রানি করে। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে সুমীকে তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। গত ১৪ অক্টোবর রাতে ‘কাতার থেকে সোনা মিয়া ফোন করেছে এবং সুমীর সাথে কথা বলতে চায়’ এ অজুহাতে ফজল হক সুমী বেগমের ঘরে ঢুকে। ঘরে ঢুকে ফজল হক পুনরায় এক সন্তানের জননী সুমী বেগমকে অনৈতিক কাজের প্রস্তাব দেয়। সুমী বেগম কৌশলে ভাসুর ফজল হকের পুরুষাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে দেয় এবং চিৎকার করতে থাকে। এ সময় ফজল হক পুরুষাঙ্গে আঘাত নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। পরে ফজল হককে আতœীয়রা টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে গৃহবধূঁ সুমী বেগম মামলা করতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম গ্রাম্য সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি মিমাংসা করার উদ্যোগ নেন। এ লক্ষে গত ২৪ অক্টোবর সকালে খারজানা গ্রামের আরফান মন্ডলের বাড়িতে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কতিপয় মাতব্বর অভিযুক্ত ফজল হকের পক্ষাশ্রিত মন্তব্য করায় সালিশি বৈঠক ভেঙ্গে যায়। পরে সুমী বেগম বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০(সংশোধিত/০৩)এ ১০ ধারায় মামলা(২৯২/১৫, তাং-৫/১১/২০১৫ইং) দায়ের করেন।
এদিকে, অভিযুক্ত ফজল হক ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলামের মাধ্যমে সালিশি বৈঠকের নামে সময় ক্ষেপন করে অত্যন্ত ধূর্ততার সাথে আইনি সুবিধা পেতে গত ৩ নভেম্বর টাঙ্গাইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে গৃহবধূঁ সুমী বেগম ও তাঁর মামলার স্বাক্ষীদের অভিযুক্ত করে একটি মামলা(নং-৮৮৩/১৫ইং, ধারা-৩২৬/৩৪ দ.বি.) দায়ের করেন।
এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মো. ফজল হকের স্বভাব-চরিত্র সুবিধাজনক নয়। এর আগেও তিনি বড় ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে অনৈতক কাজ করে সমালোচিত হন। ছোট ভাইয়ের স্ত্রী পুরুষাঙ্গ কেটে দেয়ায় ভাইকে দিয়ে সুমী বেগমকে তালাক দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অসহায় গৃহবধূঁ সুমী বেগমকে দোষী সাব্যস্ত করে ঘর ভাঙ্গতে কতিপয় মাতব্বর অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
সুমী বেগম জানান, ফজল হক একজন দুশ্চরিত্র প্রকৃতির লোক। ত্যক্ত-বিরক্তে অসহ্য হয়ে তিনি ফজল হকের পুরুষাঙ্গ কেটে দিয়েছেন। ওই ঘটনার উপযুক্ত বিচার করে দেয়ার কথা বলে ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম তাঁর কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। সুমী টাকা না দেয়ায় ইউপি সদস্য ফজল হকের কাছ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। গত ১ নভেম্বর তিনি মডেল থানায় মামলা করতে গেলে ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলামের কারসাজিতে থানায় মামলা নেয়া হয়নি বলেও সুমী বেগম দাবি করেন। ফজল হক ও ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম যোগসাজস করে তার সংসার ভেঙ্গে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও দাবি করেন সুমী বেগম।
স্বামীর পুরুষাঙ্গ কর্তনের সত্যতা স্বীকার করে ফজল হকের স্ত্রী লাইলী বেগম জানান, ঘটনাটি ষড়যন্ত্রমূলক। সুমীর সাথে অন্য পুরুষের অনৈতিক সম্পর্ককে আড়াল করতে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ইউপি সদস্য সহিদুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনাটি গ্রাম্য সালিশে মিমাংসা করার চেষ্টা করেছিলেন। উভয় পক্ষের অসহযোগিতার কারণে সম্ভব হয়নি। সুমী বেগমের কাছে টাকা দাবি ও সংসার ভেঙ্গে দেয়ার চেষ্টা করার অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন।