গণবিপ্লব রিপোর্টঃ
টাঙ্গাইল শহরে শীতের আমেজের সাথে পৌর নির্বাচনের আমেজ বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা না করা হলেও প্রার্থীদের প্রস্তুতির তোড়জোড় চলছে জোরেশোরে। প্রতিদিনই পাড়া-মহল্লায় বসছে নির্বাচনী বৈঠক-সভা-সমাবেশ। চা-স্টল ও মুদি দোকানের সামনে জটলায় পৌর সভার সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা ও যোগ্যতা নিয়ে হচ্ছে বিশ্লেষণ।
প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রাপ্ত টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাচনকে ঘিরে এ পর্যন্ত মেয়র পদে মহাজোট তথা আওয়ামীলীগের দুইজন আর ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপির একজন প্রার্থীর প্রচারণায় মাঠে গরম হাওয়া বইছে। দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন হওয়ার ঘোষণায় আওয়ামীলীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে প্রায় সম্পন্ন করেছে। আ’লীগ সূত্রে জানাগেছে, পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ড ও ৬টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে আওয়ামীলীগ তথা মহাজোট সমর্থিত কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী অনেকটাই চূড়ান্ত করা হয়েছে, মেয়র প্রার্থী দুজন হওয়ায় এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। অপরদিকে, বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোটের পৌর নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে কোন প্রস্তুতিই নেই। জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাফর আহাম্মেদ মেয়র পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালানোয় আর কেউ প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেনি। সেক্ষেত্রে জাফর আহাম্মেদই বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পাবেন-এটা প্রায় নিশ্চিত।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, ২৯.৩৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের টাঙ্গাইল পৌরসভায় ওয়ার্ড রয়েছে ১৮টি। ২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী পৌর এলাকার লোক সংখ্যা এক লাখ ৬৭ হাজার ৪১২ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৬৪৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৬ হাজার ১৩০ ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ৪৮ হাজার ৫১৪ জন। হালনাগাদ তালিকার নতুন ভোটার নিয়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ পঁচিশ হাজার।
সরেজমিনে জানা যায়, মহাজোটের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে জোড় প্রচারণা চালাচ্ছেন দুইজন। এর মধ্যে টাঙ্গাইল শহর আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল হক আলমগীর দীর্ঘদিন রাজনীতি করার ফলে দলের তৃণমূল পর্যায়ে তাঁর জনপ্রিয়তা ব্যাপক। দলের আন্দোলন সংগ্রামসহ বিভিন্ন চড়াই-উৎরই মোকাবেলা করে দলের নিবেদিত রাজনীতিক হিসেবে পরিচিতি মজবুত করেছেন তিনি। গত পৌর নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন। আওয়ামীলীগের পৌর মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সমর্থন পাওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে সিরাজুল হক আলমগীরের সমর্থকরা দাবি করেন।
অপরদিকে, আওয়ামীলীগের মনোয়ন ও প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার চেষ্টায় রয়েছেন সদ্য পূণরায় আওয়ামীলীগে যোগদানকৃত টাঙ্গাইল পৌরসভার দুই বারের নির্বাচিত সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান মিরন। সদ্য দলে যোগদান করায় তৃণমূল আওয়ামীলীগে ততটা জনপ্রিয় হয়ে উঠতে না পারলেও পৌর এলাকার অবহেলিত সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ঈর্ষণীয় জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। পৌরসভার গণমানুষের কাছে তিনি সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য। এছঅড়া, শহরের কয়েকটি বিশেষ এলাকায় তার রয়েছে ভোট ব্যাংক। দলীয় মনোনয়ন পেলে মেয়র পদে বিজয়ী হওয়ার সর্বোচ্চ সুযোগ রয়েছে তাঁর।
২০ দলীয় জোট বা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জোড় প্রচারণায় রয়েছেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাফর আহাম্মেদ; তিনি টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদকও। সাংবাদিক হিসেবে এক বিশেষ গ্রহনযাগ্যতা রয়েছে তাঁর। দলীয় মনোনয়ন পেতে তার দল বিএনপি থেকে এখনও অন্যকোন প্রার্থীকে দেখা যাচ্ছেনা। বিএনপিতে গ্রুপিং বা দলাদলিতে জর্জরিত থাকলেও আপাত দৃষ্টিতে তিনিই দলের একমাত্র প্রার্থী। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তিনি বড় বড় সভা সমাবেশ ও শোডাউন করছেন। একক প্রার্থী হওয়ায় তৃণমূল বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা দলীয় ভেদোভেদ ভুলে তাঁর গণসংযোগে অংশ গ্রহণ করছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়াসহ দলের একক প্রার্থীর হওয়ায় ফলে তিনি সরাসরি ধানের শীষ মার্কায় ভোট প্রার্থণা ও প্রচারণা চালানোয় জনগণের মাঝে তাঁর অবস্থান অনেকটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি সর্ব মহলের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব বলে দাবি করেন তার সমর্থকরা। সাংবাদিক ও পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে অ্যাডভোকেট জাফর আহাম্মেদ দলের পাশাপাশি পৌর এলাকার সুশীল সমাজের গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি বলেও দাবি তাঁর সমর্থকদের।
টাঙ্গাইল পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের পরপর দুইবার নির্বাচিত কাউন্সিলর ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালনের ফলে পৌর প্রশাসন পরিচালনায় বলিষ্ট অবস্থানে রয়েছেন অ্যাডভোকেট জাফর আহমেদ। পেশাগত পরিচিতি, একক প্রার্থী, ব্যক্তি ও দলগত অবস্থান থেকে টাঙ্গাইল পৌরসভা নির্বাচনের প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট জাফর আহাম্মেদ।
পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ড ও সংরক্ষিত আসনের ৬ টি আসনের মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী মনোনয়নে বিএনপি পিছিয়ে রয়েছে। এখনও প্রার্থী মনোনয়ন করতে না পারায় কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী করতে অনেকটাই সমস্যা হবে বলে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করছেন।