ভূঞাপুর প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী মাসুদুল হক মাসুদের নৌকা প্রতীকের কাঁটা হিসেবে অবির্ভূত হয়েছে বিদ্রোহী দুই প্রার্থী এবং বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক মন্ডলের ধানের শীষ প্রতীক দলীয় এক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে উত্থাপিত জঙ্গি কানেকশনের অভিযোগে দুশ্চিন্তায় উৎফুল্লতায় দুলছেনা ধানের শীষ। ভোটের গড়াগড়িতে শেষ পর্যন্ত কে হাসবে বিজয়ীর হাসি এ নিয়ে চলছে ব্যাপক হিসাব-নিকাশ।
ভূঞাপুর পৌর আওয়ামীলীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা জানায়, মাসুদুল হক মাসুদ গত মেয়াদে মেয়র থাকাকালে দলীয় নেতাকর্মীদের তেমন মূল্যায়ন করেন নি। এলাকার উন্নয়নে কাঙ্খিত ভূমিকা রাখতেও পারেন নি। এ বিষয়গুলো ভূঞাপুরের সব মহলেই বেশ জোরেশোরেই আলোচনা হচ্ছে। দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলও এ পৌরসভায় বেশ প্রকট। ফলে, এখনও পর্যন্ত নৌকার পক্ষে কাঙ্খিত গণজোয়ার দেখা যাচ্ছেনা।
ভূঞাপুরে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান মেয়র মাসুদুল হক মাসুদের নৌকা প্রতীতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ‘জগ’ প্রতীক নিয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের যগ্ম আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম ও মোবাইল প্রতীক নিয়ে মাসুদুল হক মাসুদের আপন ভাতিজা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি তারিকুল ইসলাম চঞ্চল। ভূঞাপুর পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা আমিনুল ইসলাম তালুকদার বিদ্যুৎ, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আজহারুল ইসলাম ও পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি তারিকুল ইসলাম চঞ্চল মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন চান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পান বর্তমান মেয়র মাসুদুল হক মাসুদ। এ কারণে ভোটের মাঠে তারা সহ ভূঞাপুর উপজেলা ও পৌর কমিটির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পাশে না থেকে বিদ্রোহীদের সমর্থন দিচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত দলীয় সব নেতাকর্মীই মাঠে নামবেন এমনটাই প্রত্যাশা মাসুদুল হকের সমর্থকদের।
ভূঞাপুর পৌর শহরের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল রেস্তোরা, পান-সিগারেটের দোকান ও চায়ের আড্ডায় এখন পৌর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা চলছে বেশি। চার মেয়র প্রার্থীর মধ্যে এবার সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক মন্ডল। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি অনাআয়েশে নির্বাচিত হবেন- এমন আশা বিএনপি নেতাকর্মীদের। পৌরসভার চার মেয়র প্রার্থীর তিন জনই আওয়ামীলীগের। এজন্য একচ্ছত্র সুবিধা পাচ্ছেন বিএনপি প্রার্থী। শুধু ভোটার নয় ভূঞাপুর পৌর শহরের সর্বত্র এ আলোচনাই প্রাধান্য পাচ্ছে। আব্দুল খালেক মন্ডল ইতোপূর্বে ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও ভূঞাপুর পৌরসভার প্রশাসক ও মেয়র ছিলেন। এসব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দীর্ঘদিন উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এবারের নির্বাচনের মাঠে বেশ জোরেশোরেই আছেন তিনি।
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আজহারুল ইসলাম আলোচনায় আছেন পারিবারিক প্রভাবের কারণে। স্থানীয় সূত্র মতে, তার বড় ভাই আজিজুল হক আজিজ ভূঞাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার। আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তিনি। আরেক বড় ভাই মিনহাজ উদ্দিন উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। ভাইদের প্রভাবের বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন তিনি। এছাড়া সেবামূলক কাজের জন্য পৌর শহরে তার সুনাম রয়েছে। এ কারণে তিনি আলোচিত মেয়র প্রার্থী।
আওয়ামীলীগের আরেক বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান মেয়র মাসুদুল হকের আপন ভাতিজা তারিকুল ইসলাম চঞ্চল তরুণদের কাছে জনপ্রিয়। এই নেতা নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ সময় প্রস্তুতি নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। তিনি বলেন বাবা-মা ও পৌরবাসীর দোয়া নিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। ভোট ডাকাতি না হলে তিনি বিজয়ী হওয়ার আশা করেন।
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী দুই প্রার্থী দলের কর্মী সমর্থকদের ভোট কম-বেশি টানবেন। এটি আওয়ামীলীগ প্রার্থী মাসুদুল হকের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। তবে নৌকা প্রতীতের জন্যই তিনি এবারও আলোচিত ও শক্তিশালী প্রার্থী। মাসুদুল হক বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে কোন লাভ নেই। আওয়ামীলীগ ছোট দল নয়। দলের শত শত নেতাকর্মী ও হাজার হাজার পৌরবাসী রয়েছে তার সঙ্গে। তাছাড়া পৌরবাসী বিগত সময়ে তার কাজের মূল্যায়ন ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পৌরবাসী তাকেই বিজয়ী করবে। এ জন্য তিনি বিদ্রোহীদের কার্যক্রমে ভীত নন।
বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক মন্ডল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ ভোট চাই। বিএনপিকে নিয়ে সরকার যত কথাই বলুক, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কেউ নির্বাচন করলে তাকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তার বিজয় শতভাগ নিশ্চিত।
উল্লেখ্য, ভূঞাপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে ৪, সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৮ ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।