গণবিপ্লব রিপোর্টঃ
টাঙ্গাইলে ভূঞাপুরে পুলিশের হামলা-মামলা থেকে রেহাই পেতে আমরণ অনশন করছেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। শনিবার (১৪ অক্টোবর) সকাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম, ছেলে বেলাল হোসেন, বেলালের স্ত্রী আলেয়া বেগম, নাততি ঋতি ও বিথীকে নিয়ে ভূঞাপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এই অনশন কর্মসূচী শুরু করেন। বিকাল ৪ টায় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অাশ্বাসে অনশন তুলে নেন ওই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ।
ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী যমুনা নাদীর পাড় ঘেষা মাদক জোন খ্যাত নলীন এলাকার যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম। তার ছেলে বেলাল। ২০১০ সালে ছাত্র অবস্থায় সন্দেহজনকভাবে পুলিশ তাদের বাড়ীতে হানা দেয়। এসময় পুলিশ তার কাছ থেকে কোন মাদকদ্রব্য না পেয়ে চলে যায়। পরে তৎকালীন ভূঞাপুর থানার এএসআই হাসান তাকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে পুলিশের সোর্স হতে বাধ্য করে। এরপর সে পুলিশের দেখানো পথে শুধুমাত্র এলাকার মাদকসেবী ও অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের লোকজন ধরিয়ে দেয়া শুরু করে। মাদককে হাতিয়ার করে তার মাধ্যমে পুলিশ অবৈধভাবে সপ্তাহে আদায় করতো তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা। আর সোর্স হিসাবে কাজ করার পুরুস্কার স্বরুপ বেলালকে দেয়া হতো সামান্য কিছু নগদ টাকা ও মাদক। পুলিশের দেয়া মাদক বিক্রি করে একসময় সে নিজেই উঠে মাদক ব্যবসায়ী। এছাড়া উদ্ধারকৃত মাদক বিক্রির দায়িত্ব’ও দেয়া হয় তাকে। আর তার কাছে কিনতে আসা মাদকসেবীদের ধরিয়ে দেয়াই ছিলো তার অন্যতম দায়িত্ব। এক সময় বিষয়টি তার পরিবারের দৃষ্টিগোচর হলে পুলিশের পাতা এই ফাঁদ থেকে তাকে বের করে আনার চেষ্টা করে তার মুক্তিযোদ্ধা বাবা। বেলাল নিজেও এ অসহনীয় জীবন থেকে বের হয়ে আসতে চায়। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এসআই কাইয়ুম, এসআই রহিম ও এএসআই লিটন। বেলাল স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাইলে তাকে ফাঁসানো হয় মিথ্যা মামলায়। মামলা থেকে বাঁচতে বেলাল পুলিশের কাজ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এবং মামলা থেকে নাম কাটানোর জন্য বাদী এএসআই লিটন এবং এস আই বাদশাকে নলিনবাজারের ব্যবসায়ী নাসিরসহ কয়েকজনকে স্বাক্ষী করে নগদ ১২ হাজার টাকা তুলে দেয়। কিন্তু টাকা নিলেও চুড়ান্ত প্রতিবেদন থেকে নাম কাটা হয়না বেলালের। আবার নতুন করে পুলিশের ভয়ংকর ফাঁদের জালে আটকা পড়ে সে। থানার ওসিকে প্রতি সপ্তাহে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে বলে নতুন নতুন বড় বড় কাজ করিয়ে নেয়ার জন্য বাড়তে থাকে তার উপর অমানুষিক চাপ।
এদিকে পুলিশের কথামতো নিরহ মানুষদের মাদক দিয়ে হয়রানী করায় এলাকাবাসী’ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বেলাল ও তার পরিবারের উপর। ওদিকে পুলিশের কাজ থেকে বিরত থাকার কারণে বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেয়া, নতুন নতুন মামলা ও ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশের কথামতো নিরহ মানুষদের মাদক দিয়ে হয়রানী করায় এলাকাবাসী’ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বেলাল ও তার পরিবারের উপর। ওদিকে পুলিশের কাজ থেকে বিরত থাকার কারণে বাড়ীঘর জ্বালিয়ে দেয়া, নতুন নতুন মামলা ও ক্রস ফায়ারের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম অভিযোগ করে বলেন, ভূঞাপুর থানা পুলিশের কয়েকজন এসআই আমার ছেলে বেলাল হোসেনকে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতে বলে। তাদের সাথে কাজ না করলে মাদকের মামলাসহ বিভিন্ন মামলার ভয় দেখায়। বাধ্য হয়ে বেলাল পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ শুরু করে। এতে স্থানীয় মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়া হয়। ধরিয়ে দেয়া ওইসব মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের কাজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পেয়ে পুলিশ ছেড়ে দেন। পুলিশের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ওইসব মাদক সেবী ও ব্যবসায়ীরা আমার ও পরিবারের উপর নির্যাতন করে।
মুক্তিযোদ্ধার ছেলে বেলাল হোসেন বলেন, আমি পুলিশের সোর্স হয়ে কাজ করছি সেটাও প্রকাশ পেয়ে গেছে। আমি পুলিশের সাথে কাজ না করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি ও মামলার ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এর আগেও দু’টি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের ছেলে পুলিশের সোর্স হিসেবে আর কাজ করতে চাচ্ছে না। কিন্তু পুলিশ তাকে জোর ও বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে বেলাল হোসেনকে সোর্স হিসেবে কাজ করতে বলছে। তাই এসব ঘটনার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের পরিবার আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। তার পরিবারকে এ ফাঁদ থেকে ফিরতে নিরাপ্তহীনতায় ভুগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জীবন ভিক্ষার দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে এ ঘটনার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের ছেলে পুলিশের সোর্স হিসেবে আর কাজ করতে চাচ্ছে না। কিন্তু পুলিশ তাকে জোর ও বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে বেলাল হোসেনকে সোর্স হিসেবে কাজ করতে বলছে। তাই এসব ঘটনার প্রতিবাদে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের পরিবার আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। তার পরিবারকে এ ফাঁদ থেকে ফিরতে নিরাপ্তহীনতায় ভুগে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জীবন ভিক্ষার দাবী জানিয়েছেন।
বেলালের স্ত্রী বলেন, বেলাল তাদের কাজ করে না দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এসআই রহিম ও কাইয়ুম বাড়ী সার্চ করে। এ সময় আমি বাড়ীতে একা ছিলাম। কোন কিছু না পাওয়ায় আমি তাদের এমন হয়রানী করতে নিষেধ করতেই তারা আমাকে শাবলের ঘা দিয়ে হত্যা করতে চান এবং অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
জগৎপুরা গ্রামের বিনা মাদকে আটক তপন বলেন, আমাকে আটকের সময় কোন মাদক পায়নি। মোটা অংকের দাবীতে সারারাত আটকে রেখে ভূঞাপুর থানা এএসআই ও কাইয়ুম, রহিম, বাদশা, হারুণসহ আরো কয়েক পুলিশ সদস্য আমাকে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এ সময় আমার পরিবার তাদের হাতে আশি হাজার টাকা তুলে দিলেও তারা আমাকে ছেড়ে না দিয়ে বেলালের মাধ্যমে নলীনের সফি নামের এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিশ পিস ইয়াবা কিনে চালান দেয়। আর এই শোকে আমার বাবা স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
এদিকে, ভূঞাপুর থানা কর্তৃক ইয়াবাসহ গোবিন্দাসী এলাকার এক মাফিয়া মাদক ব্যবসায়ীকে আটকের পর ৭লাখ ৫০হাজার টাকার ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ায় এলাকাজুড়ে বইছে নিন্দার ঝর। এছাড়া সম্প্রতি আতিক নামের খুচরা ব্যবসায়ীকে ধরলেও আতিকের সঙ্গে থাকা মাদক ডিলার ভূঞাপুর ফাজিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী রেজাকে প্রায় ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় এসআই টিটু চৌধুরী। হিটলার নামের আরেক পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ীকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এসআই হারুণ। এমন ঘটনা অসংখ্য। কতিপয় পুলিশ বড়বড় মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সপ্তাহআন্তে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদের নিবিঘ্নে ব্যবসা পরিচালনা করতে দিলেও সাধারণ মানুষ পুলিশের বেপরোয়া মাদক ফাঁদে অতিষ্ট। ভূঞাপুর থানার এএসআই লিটন, এসআই রহিম, এসআই কাইয়ুম, এসআই বাদশা, এসআই টিটু, সেকেন্ড অফিসার হারুনের নামে রয়েছে গণহারে মাদকের মামলার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আদায়ের অভিযোগ। আর (ওসি) একেএম কাউসার চৌধুরীর সাথে এসব অবৈধ টাকার সমন্বয় করেন দীর্ঘদিন ভূঞাপুর থানায় কর্মরত ওসির খাস কনেস্টেবল খোরশেদ।
পুলিশের এমন ভূমিকায় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহাম্মদ আসলাম খান বলেন, কোন পুলিশ সদস্য যদি সামারী করার জন্য বা অন্য কোন কারণে নিরহ মানুষদের মাদক দিয়ে হয়রানী করে এবং তা প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের আইনের আওতায় এনে বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরো বলেন, কতিপয় পুলিশ অসাধু সদস্যের অপকর্মের দায় পুরো পুলিশ বাহিনী নিতে পারে না। তদন্তে প্রমাণিত হলে অপরাধীরা ছাড় পাবে না। অনেক সদস্যই সর্বনিম্ন থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি পাচ্ছেন।