ভ্রাম্যমান প্রতিনিধিঃ
সৌদি আরবের রিয়াদে শনিবার(৫ মার্চ) সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫ বাংলাদেশীর মধ্যে টাঙ্গাইলের কালিহাতীর আবুল হোসেন (৩৫) ও নুরুল ইসলাম (৪৫)-এর গ্রামের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
রোববার(৬ মার্চ) সকালে কালিহাতী উপজেলার বল্লা ইউনিয়নের মমিননগরে আবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের বড় ছেলেকে হারিয়ে সবাই শোকে পাথর। আবুলের বাবা লাল মাহমুদ ও মা তাদের ছেলেকে হারিয়ে কথা বলাই বন্ধ হয়ে গেছে। আবুলের তিন বছরের শিশু হাসান এখনো বুঝতে পারছে না যে, তার বাবা আর ফিরে আসবে না। শুধু চেয়ে চেয়ে সবার কান্না দেখছে। আবার মাঝে মাঝে খেলাধূলায় মনোযোগ দিচ্ছে। কোলের সন্তানকে নিয়ে ৬ মাসের অন্তসত্ত্বা আবুলের স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়ে বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। পরিবারের লোকজনদের শান্তনা দেয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে আতœীয়-স্বজন ও স্থানীয় লোকজন। সবাই আবুলের বাড়িতে এসে ভির করছে।
লাল মাহমুদ জানান, সংসারে অভাব-অনটনের কারণে বিগত ২০০৩ সালে কয়েক শতাংশ জমি বিক্রি করে অনেক কষ্টে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি। পাঠানোর পর আবুল কষ্ট করে রোজগারের কিছু কিছু টাকা বাড়িতে পাঠাত। সেই টাকা দিয়েই আমাদের সংসারটা চলত। এর পর বিগত ২০০৮ সালে আবুল দেশে আসলে তাকে বিয়ে করানো হয়। তার ঘরে হাসান নামের তিন বছরে একটি ছেলে রয়েছে। এছাড়া আবুলের স্ত্রী বর্তমানে ৬ মাসের অন্তসত্ত্বা। আবুল ছিল দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড়। এখন ছেলেকে হারিয়ে আমরা পথে বসে গেছি।
একই চিত্র কালিহাতী উপজেলার বল্লা ইউনিয়নের বাড্ডা উত্তর পাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের বাড়িতেও। তার বাবা আব্দুল খালেক। চার ভাই তিন বোনের মধ্যে নুরুল ইসলাম সেজো। পরিবারের সবাই পৃথক। তার বাড়িতে গিয়ে প্রথমেই দেখা মিলল স্ত্রী আসমা বেগমের। স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে শোকে বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। প্রতিবেশী ও স্বজনেরা মাথায় পানি ঢালছে এবং শান্তনা দেয়ারও চেষ্টা করছে। কিন্তু তাতে কি শান্ত হবে আসমা? নুরুল ইসলাম এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। মেয়ে আখলিমাকে বিয়ে দিয়েছে সৌদি প্রবাসী এক ছেলের সাথে। ছেলে আসাদুল্লা (২২) বর্তমানে স্থানীয় একটি কলেজে অধ্যয়নরত। বাড়ির উঠানেই বসে চাপা কান্না কাঁদছেন নুরুলের ছেলে আসাদুল্লা। এসময় তার মুখে একটাই কথা আমার সাথে আর কোনদিন বাবা কথা বলবে না।
স্বজনরা জানান, প্রতিদিন কাজ শেষ করে নুরুল ইসলাম তার ছেলের সাথে রাতে কথা বলত। বাড়ির খোঁজ-খবর নিত। ছেলে ও পরিবারের সবাইকে খুব আদর করত। দেশে আসলে সবার খোঁজ-খবর নিত। নিহতদের লাশ ফেরত আনার বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে তাদের খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।